ফাঁকা ১৩ আসনে সিদ্ধান্ত নেই বিএনপির

আদালতের আদেশে ফাঁকা হয়ে যাওয়া ১৩ আসনে অন্য কোনো প্রার্থীকে সমর্থনের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। এরই মধ্যে হাইকোর্টের আদেশে প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে গেছে আরও তিনটিতে। যদিও এই তিনজন আপিল করতে পারবেন। খবর ঢাকা টাইমসের।

এর আগে যে ১৩টি আসন ফাঁকা হয়েছে, সেখানে তিনটি ছাড়া সমর্থন দেওয়ার মতোও সমমনা প্রার্থী নেই। কারণ, ২০ দলীয় জোট বা ঐক্যফ্রন্টের কোনো শরিক দলের সেখানে প্রার্থী নেই। এ অবস্থায় দল থেকে কাকে সমর্থন দেবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে বিএনপির হাইকমান্ড।

যদিও ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে বিএনপির নেতাদের মধ্যে বৈধ প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছিলেন তাদের চিঠি দিচ্ছে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। কিন্তু আইনি জটিলতায় রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকে তাদের প্রতীক দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, এখন নতুন করে কাউকে প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নির্বাচন কমিশনের বিধানে নেই।

ঢাকা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবু আশফাক। উপজেলা চেয়ারম্যান নিয়ে আইনি জটিলতায় মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালতে তার প্রার্থিতা স্থগিত হয়। সেখানে বিএনপি, ২০ দল বা ঐক্যফ্রন্টের এখন কোনো প্রার্থী নেই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম। তাকে সমর্থন দেওয়া হতে পারে এমন গুঞ্জন আছে।

ঢাকা-২০ আসনে তমিজ উদ্দিনের জায়গায় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা রহমানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে দলের মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমাকে যেন প্রতীক দেওয়া হয়, সে জন্য আপিল করব।’

তবে ৯ ডিসেম্বর বিএনপি তমিজকে প্রার্থী করার চিঠি দেওয়ার পর সুলতানার প্রার্থিতা স্বাভাবিক নিয়মেই বাতিল হয়ে গেছে। ফলে তিনি আর প্রতীক পাবেন না।

যদিও এই আসনটিতে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির এম এ মান্নান (তারা প্রতীক) নির্বাচন করছেন। সুলতানা রহমান শেষ পর্যন্ত প্রতীক না পেলে মান্নান সমর্থন পেতে পারেন ঐক্যফ্রন্টের।

সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি জটিলতায় সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েও তার প্রার্থিতা স্থগিত হয়। সেখানে গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে মো. মুকাব্বির খানকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। তবে এখানে জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের মুনতাসির আলীও এই আসনে বৈধ প্রার্থী। তিনিও চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ বলেন, ‘এখনো কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। আশা করি, দ্রুত জানানো হবে।’

মুকাব্বির খানকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আহমদ বলেন, ‘তাকে নিয়েই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তারই সম্ভাবনা আছে।’

মানিকগঞ্জ-৩ আসনে ঋণ খেলাপের কারণে আফরোজা খান রিতার মনোনয়ন স্থগিত হয়েছে। সেখানে গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে মফিজুল ইসলাম খান কামালকে সমর্থন দিতে পারে বিএনপি। তাকে সমর্থন দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই বিএনপির সামনে।

জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ফজলুর রহমানের মনোনয়ন স্থগিত হয়েছে মঙ্গলবার। সেখানে বিএনপির ফয়সাল আলিমকে নতুন করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনিও ৯ ডিসেম্বরের পর আর প্রার্থী থাকেননি। ফলে তারও প্রতীক পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

রাজশাহী-৬ আসনের আবু সাইদ চাঁদের প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর সেখানে সমর্থন দেওয়ার মতো কাউকে পাচ্ছে না বিএনপি। এই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলের বা স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীই নেই।

এ ছাড়া এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন বা ইসলামী আন্দোলনের ‘হাতপাখা’ প্রতীকের প্রার্থী বাবুল ইসলামকে নিয়ে শুরুতে চিন্তা করলেও সেখানকার বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান খানকে চিঠি দেয় বিএনপি। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে বলেন, ‘এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ২০২৩ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন।’

ঝিনাইদহ-২ আসনে বিএনপির আবদুল মজিদের প্রার্থিতা বাতিলের পর বিএনপি কাউকে সমর্থন দেওয়া যায় কি না, তা খুঁজছে। এই আসনে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আসাদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের ফখরুল ইসলাম ও জাকের পার্টির আবু তালেব সেলিম প্রার্থী আছেন। এদের মধ্যে বাসদকে সমর্থন দেওয়া হতে পারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে মোসলেম উদ্দিনের প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর বিএনপি চিঠি দেয় নাছির উদ্দিন হাজারীকে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা সেই চিঠি গ্রহণ করেননি।

এই আসনে আইনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আছে। তবে শেষ পর্যন্ত আসনটি প্রার্থীশূন্য থাকারই সম্ভাবনার কথা জানালেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক।

চাঁদপুর-৪ আসনে হান্নানের প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর রিয়াজউদ্দিন নসুকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তিনিও বৈধ প্রার্থী নন আর। সেখানকার ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মকবুল হোসেনকে সমর্থন দেওয়ার কথা আলোচনা চলছে। তার পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কাজ করছেন।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বলেন, ‘আমি নিজেও নির্বাচন করতেছি। কিন্তু অবরুদ্ধ হয়ে বাসায় আছি। বের হতে পারছি না। আর এ বিষয়ে কিছু বলতেও পারছি না। কেন্দ্রে খোঁজ নিতে পারেন।’

বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মিল্টন মোর্শেদ। সেখানে বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নেই।

এই আসনে বৈধ প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন এনপিপির মোনতেজার রহমান, ইসলামী আন্দোলনের শফিকুল ইসলাম, বাসদের শহিদুল ইসলাম এবং দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে দল থেকে সমর্থন দেয়নি বিএনপি। কাউকে দল থেকে সমর্থন দেওয়া হবে কি না তাও নিশ্চিত নন জেলা বিএনপির নেতারা।

বগুড়া বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই আসনের ব্যাপারে সর্বশেষ কী হবে, তা নিয়ে কোনো নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়নি। যে কারণে কিছু বলাও সম্ভব হচ্ছে না।’

জামালপুর-১ আসনে রশিদুজ্জামান মিল্লাতের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাওয়ায় ওই আসনে গণফোরামের সিরাজুল হককে বিএনপি সমর্থন দেওয়ার চিন্তা করছে।

জামালপুর-৪ আসনে ফরিদুল কবির তালুকদার শামীমের প্রার্থিতা বাতিলের পর বিএনপির সামনে কাউকে সমর্থন দেওয়ারও সুযোগ নেই। এখানে আওয়ামী লীগের বাইরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছেন। মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন বলেন, ‘আমাদের দুই আসনে প্রার্থী নেই। তবে বিকল্প কাউকে সমর্থন দেওয়া যায় কি না, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। হয়তো আজকের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’

নীলফামারী-৪ আসনে বেবী নাজনীনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রথমে দল থেকে মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেনের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় এই কণ্ঠশিল্পীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে তিনিও চিঠি পাওয়ার পর চিন্তায় আছেন অন্যদের মতো রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে প্রতীক দেবেন কি না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমাদের অনেক বৈধ প্রার্থী আছে। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আবার যেখানে দলীয় প্রার্থী নেই, সেখানে জোটের অন্য কোনো শরিক দলের বৈধ প্রার্থী থাকলে তাকে সমর্থন দেওয়া হবে।’

সূত্র: ঢাকা টাইমস